স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকনের বান্ধবী নাজনীন মুন্নি, বর্তমানে গ্লোবাল টেলিভিশনের হেড অব নিউজ। সম্প্রতি তিনি ডিবিসি নিউজে অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অদৃশ্য এক শক্তির কারসাজিতে টেলিভিশনের বার্তা বিভাগের সাত-আট পদ টপকে চলতি বছরের জুলাইয়ে তিনি বার্তা প্রধানের পদ বাগিয়েছেন। জনশ্রুতি আছে, এ ধরণের কাজে তিনি অত্যন্ত দক্ষ। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬-১৭ বছরে গণমাধ্যমে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি।
আওয়ামী লীগের দোসর মোজাম্মেল বাবুর ছত্রছায়ায় প্রায় এক যুগ একাত্তর টেলিভিশনে কাটিয়েছেন দুর্ধর্ষ চতুর এই নাজনীন মুন্নি। এ সময়ে বাগিয়েছেন ফ্ল্যাট-প্লট-বাড়ি-গাড়িসহ কোটি টাকা। মোজাম্মেল বাবুর সঙ্গে গড়ে তোলেন লুটপাটের রামরাজত্ব। তৎকালীন সময়ে এ নিয়ে পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে। তখনকার ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস আশরাফুল আলম খোকনের সাথে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন এই নাজনীন মুন্নি। নানা হুমকি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বহুমুখী সমালোচনার মুখে তিনি আর টিকতে পারছিলেন না একাত্তর টেলিভিশনে।
এ অবস্থায় ২০২২ সালের অক্টোবরের দিকে নাজনীন মুন্নির ইচ্ছা জাগে নির্বাচনের মাঠ থেকে বিপুল অর্থ তোলার। এ চিন্তা থেকেই ডিবিসিতে যোগ দেন অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর পদে। এসময় রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে নির্লজ্জ চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে ডিবিসির নিরীহ সাধারণ সাংবাদিকরা। চ্যানেলটির মালিক ফ্যাসিস্ট সরকারের আরেক দোসর ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সাথে এরই মধ্যে গাঢ় সখ্য গড়ে ওঠে নাজনীন মুন্নির।
একপর্যায়ে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন হলে ডিবিসির সাংবাদিকরা নাজনীন মুন্নির অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে নামেন। মহাখালীতে ডিবিসি কার্যালয়ের সামনে লাগাতার সমাবেশ ও মানববন্ধনসহ বিক্ষোভের মুখে কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন মুন্নি।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঠিক এক বছরের মাথায় পঁচিশের জুলাইয়ে গ্লোবাল টিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘প্রশ্নগুলো সহজ’ শিরোনামের টকশোতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বয়ান নির্মাণ অব্যাহত রাখেন নাজনীন মুন্নি। সেখানে অবিরাম কটাক্ষ করা হয় অন্তবর্তী সরকার, এনসিপি ও বিএনপিকে। আলাপের ছলে ধুয়ে দেয়া হয় তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের। বাদ পড়ে না জামায়াত-শিবিরও। প্রতিরাতে আওয়ামী দোসরদের নিয়ে মজমা বসে সেখানে। গণমাধ্যমের অনেকের মতে, সাবেক এমপিসহ আওয়ামী লীগের লোকজন মুন্নিকে দিয়ে কৌশলে এসব করাচ্ছে।
বিষয়টি অনেকের নজরে এলেও প্রথম কথা বলেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর তিনি নিজের ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি পোস্ট দেন। লেখাটি ছিলো এমন-
‘নাজনীন মুন্নির ৭১ টিভি ও ডিবিসি’র কা’স্ট’মার ছিলো ইকবাল সোবহান গং! বর্তমানে তিনি গ্লোবাল টিভিতে! মুন্নির কা’স্ট’মার হলেন আনিস আলমগীর গং! ।
সাংবাদিক ইলিয়াস নিজের ‘বাংলা এডিশন’ নামের চ্যানেলে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেন। জানা যায়, এতে নড়েচড়ে বসে গ্লোবাল টিভি কর্তৃপক্ষ। তাৎক্ষণিক ‘প্রশ্নগুলো সহজ’ টকশো থেকে নাজনীন মুন্নিকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বলয়ের অদৃশ্য হাতের ইশারায় তিনি চ্যানেলটির বার্তা প্রধানের পদে বহাল তবিয়তে আছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন গোপন কার্যক্রম।
গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, পতিত আওয়ামী বলয়ের অদৃশ্য ওই হাতের ইশারায় নাজনীন মুন্নি ফের টকশোটিতে উপস্থাপনা চালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন। তিনি নিজেও একান্ত নিজস্ব মহলে বলেছেন, "আবার পর্দায় ফিরছি শিগগিরই ।"



